ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শিরোনাম ::
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রৌমারীতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত  কুড়িগ্রামে বিয়ের ৩ সপ্তাহের মাথায় নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি  রৌমারী উপজেলার আহব্বায়ক কমিটির অনুমোদন   আজ দুপুর ১টার মধ্যে ১২ জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের শঙ্কা কুরবানির বিধান ও কি পরিমান ঋণ থাকলেও তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব কুড়িগ্রামে নানা আয়োজনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন কচাকাটায় শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল রৌমারীতে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত রৌমারীতে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১০০ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে ৮ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৯ নারী পুরুষ ও শিশুকে পুশইন করেছে বিএসএফ

বাল্য বিবাহ রুখে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী অনামিকা রানীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 

উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে:
মেয়ে আমি সমানে সমান,মেয়ে শিশু বোঝা নয়, সুযোগ দিলেই সম্পদ হয়। এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে নিজের বুদ্ধি মত্তাকে কাজে লাগিয়ে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি-চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্টের মাঠকর্মীর সহযোগিতায় বাবা,মাকে বুঝিয়ে নিজের বাল্য বিবাহ রুখে দিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া বুদ্ধিমতি প্রতিবাদী শিক্ষার্থী কুমারী অনামিকা রানী। তারপর থেকে এই অল্প বয়সী মেধাবী অনামিকা নিজেকে সংগ্রামী ও প্রতিবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে আর থেমে থাকেনি তখন থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সহ-সমাজের অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে সে একাধারে কাজ করে যাচ্ছে আজ অবধি।
জানাযায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সিমান্ত ঘেঁষা কাশিপুর ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ডের আজোয়াটারী গ্রামের অনিল চন্দ্র রায় ও ফাল্গুনী রানীর সেই সাহসী কন্যা প্রগতিশীল শিক্ষার্থী কুমারী অনামিকা রানী। সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবাদী শিক্ষার্থী অনামিকা রানীর সাথে কথা বললে সে প্রতিবেদক কে জানায় তার জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনী সহ-ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প:২০১৬সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ- 4,25 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১৭ সালে হঠাৎ আমার বাবা-মা জানিনা কার  প্ররোচনায় আমার বাল্যবিবাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, কিন্তূ আমার কোনভাবেই বিয়েতে মত ছিল না এই কথাটি তাদের কে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পরি। সেই সময়ে আমাদের এলাকায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্টে নামের একটি সংস্থা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভীষণ ভাবে সারা ফেলেছে, এমতাবস্থায় মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো আমি একদিন মহিদেবের মাঠ কর্মীর সরণাপন্ন হয়ে ওনাকে জানাই যে আমার বাল্যবিবাহ দিবে মর্মে পরিবারে কথা বলাবলি হচ্ছে,যে ভাবেই হোক আপনি আমার বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন তখন উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল চিন্তা করিও না “মা”সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরে দিনেই মাঠকর্মী আমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে এবং আমার মতামত গুলি প্রকাশ করে বলেন,আপনার মেধা সম্পন্ন মেয়েটার জীবন কোনভাবেই নষ্ট করা কাম্য নয় ,ছেলে নয় তাতে
কি হয়েছে সৃষ্টিকর্তা চাইলে এই মেধাবী মেয়ে একদিন সমাজ সহ-আপনাদের সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে। তারপর বাল্যবিবাহের আইন -কানুন সুফল,কুফল নিয়ে বৃহৎ আলোচনান্তে একপর্যায়ে বাবা-মা তাঁদের অবস্থান থেকে ফেরত আসে। তখন থেকে আমার বাবা আমাদের দুই বোনকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
তারপর থেকে বাবা- মেয়ে মহিদেবের মাঠকর্মীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে শুরু হয় এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সংগ্রাম। কোন মেয়ে যাতে বাল্যবিবাহের শিকার না হয় আশেপাশে তুমুল ভাবে সচেতনতা সৃষ্টিকরি, এবং ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলি।বাবার আদেশে পরবর্তীতে মহিদেব প্রজেক্টের বিভিন্ন সচেতনামূলক প্রশিক্ষণে মাসিক মিটিংএ নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠি,জীবনের সুস্থ সুন্দর যাত্রা শুরু হয় আমার। এরপর থেকে থেমে থাকিনি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে মেয়ে শিশুদের অধিকার আদায়,বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মহিদেব সহ-বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ করি যেমন জীবন দক্ষতা নেতৃত্ব দেওয়া নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে তৈরি করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন করে নতুন করে জীবন গড়তে পথ-চলা শুরু হয় আমার।
তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমার,সমাজের কুসংস্কার ও ভয়ভীতি কে তুচ্ছ করে নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শিখি মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মেয়ে শিশুদের নিয়ে ক্যাম্পেইন, রেলী সহ- সচেতনামূলক সেশন পরিচালনা করতে থাকি, শিশু সুরক্ষা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং কাজি,পুরহীত দের সাথে আলোচনা করি। জন্মসনদ নিশ্চিত করন এবং মেয়েদের জন্ম অভ্যার্থনায় অংশগ্রহণ করি, সমাজে ধর্ষণ প্রতিরোধে বিট পুলিশীং সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ সহ প্রত্যেক্ষ পরোক্ষভাবে ভাবে বাল্যবিবাহ রোধ করে আসছি,বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রতিটি ইউনিয়নে”আদালত বিতর্ক”প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনা করার সুযোগ ও হয় আমার। ২০২২ সালে Child not Bride (CNB) প্রজেক্টে মেয়ে সন্তানদের ইস্যু নিয়েই Plan International Bangladesh এর সাথে কাজ করেছি। তারপর গার্লস লীডারশীপ -২০২৩ এ অংশ গ্রহণ করে বক্তৃতার মাধ্যমে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা কথা তুলে ধরি সেই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির প্রধান স্যার, সেখানেও সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য পুরস্কার প্রাপ্ত হই। অন্যদিকে  নারীর ক্ষমতায়নে গার্লস টেক- ওভার ২০২৪-এ অংশ গ্রহণ করে আমাদের জেলায় একদিনের জন্য পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছিলাম,সেখানেও ক্রেষ্ট সহ-অন্যান্য পুরুস্কার গ্রহণ করি।গার্লস লীগারশীপ ২০২৩ ও গার্লস টেক-ওভার ২০২৪ এ অংশগ্রহন করে আরো সক্ষমতা বেড়ে যায় আমার।
শুধু এইটাতে থেমে থাকিনি আমি শিশুবিষয়ক অসংখ্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী বালিকা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। সমাজে অবহেলিত মেয়েদের জীবন সুন্দর করতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছি,এটি অব্যাহত থাকবে আমার।সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার নামই জীবন।আর সেই জীবন যুদ্ধের একটু ব্যাতিক্রম হিসেবে নিজের জীবনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলেছি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদমুখর ছিলাম আমি, চারপাশে যখন দেখতাম আমার মতো মেয়ে শিশুদের নিয়ে পরিবার কিংবা সমাজের লোকজনের তিরস্কার, অবহেলা করতে তখন নিজেকে সহ্য করতে পারতাম না, সেই জলন্ত চেতনার মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করার ভাবনা পড়াশুনার পাশাপাশি মেয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।মহিদেব সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে বিভিন্ন কো-কারি্কুলাম কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেছি, যেমন কবিতা আবৃত্তি একক সংগীত, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, একক অভিনয়, কুইজ,ভাষা ও সাহিত্যে এবং বিজ্ঞান বিষয়ে স্কুল, কলেজ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণ বিভিন্ন ক্রেষ্ট ও সার্টিফিকেট,অসংখ্য পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছি।
আমি ২০১৯ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ -4,50 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০২২সালে (এসএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ -5,00 পেয়ে উত্তীর্ণ হই, এবছর ২০২৪ সালে (এইচএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ -4,58 পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পড়াশোনা সহ -সব কিছুতেই বাবা মায়ের সাপোর্ট আশির্বাদ,অনুপ্রেরণায় এতদূর পর্যন্ত এসেছি। আমি কৃতজ্ঞার সাথে শিকার করছি আমার জীবনে বদলে দিয়ে নতুন করে পথচলার সারথী হিসেবে পাশে ছিলেন মহিদেব প্রজেক্টের মাঠকর্মী। সেই থেকে আজঅবধি মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি-চাইল্ড নট ব্রাইডের সকল প্রোগ্রামে অংশ করে আসছি। বিশেষ করে মেয়ে শিশুর ইস্যু নিয়ে কাজ করছি।আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কা‌জ করে আমার স্বপ্ন পুরণ করে সকলের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে সুস্থ সুন্দর গড়তে আমাদের সমাজের‌ অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে সর্বদা কাজ করে যেতে চাই।
ট্যাগস :

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রৌমারীতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত 

বাল্য বিবাহ রুখে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী অনামিকা রানীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 

আপডেট সময় : ০৪:১৪:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে:
মেয়ে আমি সমানে সমান,মেয়ে শিশু বোঝা নয়, সুযোগ দিলেই সম্পদ হয়। এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে নিজের বুদ্ধি মত্তাকে কাজে লাগিয়ে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি-চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্টের মাঠকর্মীর সহযোগিতায় বাবা,মাকে বুঝিয়ে নিজের বাল্য বিবাহ রুখে দিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া বুদ্ধিমতি প্রতিবাদী শিক্ষার্থী কুমারী অনামিকা রানী। তারপর থেকে এই অল্প বয়সী মেধাবী অনামিকা নিজেকে সংগ্রামী ও প্রতিবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে আর থেমে থাকেনি তখন থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সহ-সমাজের অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে সে একাধারে কাজ করে যাচ্ছে আজ অবধি।
জানাযায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সিমান্ত ঘেঁষা কাশিপুর ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ডের আজোয়াটারী গ্রামের অনিল চন্দ্র রায় ও ফাল্গুনী রানীর সেই সাহসী কন্যা প্রগতিশীল শিক্ষার্থী কুমারী অনামিকা রানী। সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবাদী শিক্ষার্থী অনামিকা রানীর সাথে কথা বললে সে প্রতিবেদক কে জানায় তার জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনী সহ-ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প:২০১৬সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ- 4,25 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১৭ সালে হঠাৎ আমার বাবা-মা জানিনা কার  প্ররোচনায় আমার বাল্যবিবাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, কিন্তূ আমার কোনভাবেই বিয়েতে মত ছিল না এই কথাটি তাদের কে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পরি। সেই সময়ে আমাদের এলাকায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্টে নামের একটি সংস্থা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভীষণ ভাবে সারা ফেলেছে, এমতাবস্থায় মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো আমি একদিন মহিদেবের মাঠ কর্মীর সরণাপন্ন হয়ে ওনাকে জানাই যে আমার বাল্যবিবাহ দিবে মর্মে পরিবারে কথা বলাবলি হচ্ছে,যে ভাবেই হোক আপনি আমার বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন তখন উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল চিন্তা করিও না “মা”সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরে দিনেই মাঠকর্মী আমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে এবং আমার মতামত গুলি প্রকাশ করে বলেন,আপনার মেধা সম্পন্ন মেয়েটার জীবন কোনভাবেই নষ্ট করা কাম্য নয় ,ছেলে নয় তাতে
কি হয়েছে সৃষ্টিকর্তা চাইলে এই মেধাবী মেয়ে একদিন সমাজ সহ-আপনাদের সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে। তারপর বাল্যবিবাহের আইন -কানুন সুফল,কুফল নিয়ে বৃহৎ আলোচনান্তে একপর্যায়ে বাবা-মা তাঁদের অবস্থান থেকে ফেরত আসে। তখন থেকে আমার বাবা আমাদের দুই বোনকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
তারপর থেকে বাবা- মেয়ে মহিদেবের মাঠকর্মীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে শুরু হয় এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সংগ্রাম। কোন মেয়ে যাতে বাল্যবিবাহের শিকার না হয় আশেপাশে তুমুল ভাবে সচেতনতা সৃষ্টিকরি, এবং ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলি।বাবার আদেশে পরবর্তীতে মহিদেব প্রজেক্টের বিভিন্ন সচেতনামূলক প্রশিক্ষণে মাসিক মিটিংএ নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠি,জীবনের সুস্থ সুন্দর যাত্রা শুরু হয় আমার। এরপর থেকে থেমে থাকিনি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে মেয়ে শিশুদের অধিকার আদায়,বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মহিদেব সহ-বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ করি যেমন জীবন দক্ষতা নেতৃত্ব দেওয়া নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে তৈরি করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন করে নতুন করে জীবন গড়তে পথ-চলা শুরু হয় আমার।
তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমার,সমাজের কুসংস্কার ও ভয়ভীতি কে তুচ্ছ করে নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শিখি মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মেয়ে শিশুদের নিয়ে ক্যাম্পেইন, রেলী সহ- সচেতনামূলক সেশন পরিচালনা করতে থাকি, শিশু সুরক্ষা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং কাজি,পুরহীত দের সাথে আলোচনা করি। জন্মসনদ নিশ্চিত করন এবং মেয়েদের জন্ম অভ্যার্থনায় অংশগ্রহণ করি, সমাজে ধর্ষণ প্রতিরোধে বিট পুলিশীং সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ সহ প্রত্যেক্ষ পরোক্ষভাবে ভাবে বাল্যবিবাহ রোধ করে আসছি,বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রতিটি ইউনিয়নে”আদালত বিতর্ক”প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনা করার সুযোগ ও হয় আমার। ২০২২ সালে Child not Bride (CNB) প্রজেক্টে মেয়ে সন্তানদের ইস্যু নিয়েই Plan International Bangladesh এর সাথে কাজ করেছি। তারপর গার্লস লীডারশীপ -২০২৩ এ অংশ গ্রহণ করে বক্তৃতার মাধ্যমে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা কথা তুলে ধরি সেই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির প্রধান স্যার, সেখানেও সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য পুরস্কার প্রাপ্ত হই। অন্যদিকে  নারীর ক্ষমতায়নে গার্লস টেক- ওভার ২০২৪-এ অংশ গ্রহণ করে আমাদের জেলায় একদিনের জন্য পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছিলাম,সেখানেও ক্রেষ্ট সহ-অন্যান্য পুরুস্কার গ্রহণ করি।গার্লস লীগারশীপ ২০২৩ ও গার্লস টেক-ওভার ২০২৪ এ অংশগ্রহন করে আরো সক্ষমতা বেড়ে যায় আমার।
শুধু এইটাতে থেমে থাকিনি আমি শিশুবিষয়ক অসংখ্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী বালিকা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। সমাজে অবহেলিত মেয়েদের জীবন সুন্দর করতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছি,এটি অব্যাহত থাকবে আমার।সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার নামই জীবন।আর সেই জীবন যুদ্ধের একটু ব্যাতিক্রম হিসেবে নিজের জীবনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলেছি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদমুখর ছিলাম আমি, চারপাশে যখন দেখতাম আমার মতো মেয়ে শিশুদের নিয়ে পরিবার কিংবা সমাজের লোকজনের তিরস্কার, অবহেলা করতে তখন নিজেকে সহ্য করতে পারতাম না, সেই জলন্ত চেতনার মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করার ভাবনা পড়াশুনার পাশাপাশি মেয়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।মহিদেব সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে বিভিন্ন কো-কারি্কুলাম কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেছি, যেমন কবিতা আবৃত্তি একক সংগীত, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, একক অভিনয়, কুইজ,ভাষা ও সাহিত্যে এবং বিজ্ঞান বিষয়ে স্কুল, কলেজ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণ বিভিন্ন ক্রেষ্ট ও সার্টিফিকেট,অসংখ্য পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছি।
আমি ২০১৯ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ -4,50 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০২২সালে (এসএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ -5,00 পেয়ে উত্তীর্ণ হই, এবছর ২০২৪ সালে (এইচএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ -4,58 পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পড়াশোনা সহ -সব কিছুতেই বাবা মায়ের সাপোর্ট আশির্বাদ,অনুপ্রেরণায় এতদূর পর্যন্ত এসেছি। আমি কৃতজ্ঞার সাথে শিকার করছি আমার জীবনে বদলে দিয়ে নতুন করে পথচলার সারথী হিসেবে পাশে ছিলেন মহিদেব প্রজেক্টের মাঠকর্মী। সেই থেকে আজঅবধি মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি-চাইল্ড নট ব্রাইডের সকল প্রোগ্রামে অংশ করে আসছি। বিশেষ করে মেয়ে শিশুর ইস্যু নিয়ে কাজ করছি।আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কা‌জ করে আমার স্বপ্ন পুরণ করে সকলের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে সুস্থ সুন্দর গড়তে আমাদের সমাজের‌ অবহেলিত মেয়ে শিশুদের নিয়ে সর্বদা কাজ করে যেতে চাই।